সংযম, সহনশীলতা ধারণ করুন যাপিতজীবনে

পবিত্র রমজানে আল্লাহ তায়ালা তার বান্দাদের নির্দেশ দিয়েছেন ত্যাগের, সংযমের, উদরতা আর সহনশীলতার। অন্যের প্রতি সহনশীল হয়ে প্রভুর নৈকট্য অর্জনের সুবর্ণ সুযোগ রয়েছে এ মাসে। আর সহনশীলতা ও ক্ষমা হলো মুমিনের অনন্য এক গুণ, বৈশিষ্ট্য। রাসুল (স) এরশাদ করেছেন, রোজার মাস হলো সহনশীলতা ও সহমর্মিতার মাস। (মুসলিম)।

পবিত্র এই মাসে সব প্রকার গুনাহের কাজ থেকে বিরত থাকা, ধৈর্য ধারণ করা এবং মানুষের প্রতি সদাচরণ করা অবশ্যকর্তব্য। ইসলাম শান্তির ধর্ম, দয়ার ধর্ম। এই ধর্ম দীক্ষা দেয় সহনশীলতার, উদারতার। ইসলামের সুমহান শিক্ষা হলো-প্রতিশোধ না নিয়ে ক্ষমা করে দেওয়া। রাসুলুল্লাহ (স) বলেছেন, সহনশীলতা অপেক্ষা অধিক উত্তম ও অত্যধিক কল্যাণকর বস্তু আর কিছুই কাউকে দান করা হয়নি (বোখারি)।

পবিত্র মাহে রমজানের ওসিলায় আমরা যদি সহনশীলতার অভ্যাস গড়ে তুলতে পারি, সংযমী হতে পারি, তবেই আমাদের রোজা পূর্ণতা পাবে। রমজান শুধু একটি মাসের সাধনা নয়, এই মাসে চর্চিত সংযমের প্রতিফলন ঘটাতে হবে বছরের বাকিটা সময়ে, জীবনের বাকিটা সময়ে, যাপিত জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে, তা ছোট হোক বা বড়, সংযমের এই শিক্ষা ধারণ করতে হবে। সহনশীলতা ও উদারতা ইসলামের মৌলিক শিক্ষা, যা প্রতিটি মুসলমানের মধ্যে থাকা বাঞ্ছনীয়।

তবে এর অর্থ এই নয় যে, ইসলাম কোনো অন্যায়কে প্রশ্রয় দেয়। ইসলাম সহনশীল কিন্তু অন্যায়, জুলুমের ব্যাপারে কোনো ধরনের ছাড় দেয় না। জীবনে সফল হতে হলে ধৈর্য ও সহনশীলতা থাকতে হবে। হাদিস শরিফে রয়েছে, ধৈর্য হলো গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা, ইবাদতের জন্য কষ্ট ও ত্যাগ স্বীকার করা, বিপদে বিচলিত না হওয়া।

এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেছেন, হে মুমিনরা! তোমরা ধৈর্য ও সালাতের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা করো। নিশ্চয়ই আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সঙ্গে আছেন। (সুরা বাকারা)।

অতএব পবিত্র এ রমজানে মানুষের সঙ্গে আচরণের ক্ষেত্রে সহনশীল হতে হবে। ক্ষুধা-তৃষ্ণার কারণে মেজাজ খিটখিটে হয়ে থাকতে পারে; কিন্তু এর প্রভাব যেন আচরণে প্রকাশ না পায়, সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। কাজের লোকদের সঙ্গে কখনো খারাপ আচরণ করা যাবে না। তারাও আল্লাহর বান্দা। তার জায়গায় আপনিও থাকতে পারতেন। আর ভবিষ্যৎ সম্পর্কে আলিমুল গায়েব খোদা তায়ালা ছাড়া আর কেইবা বলতে পারেন! শুধু অভুক্ত থেকে রোজা রাখলেই রোজার হক আদায় হবে না।

রাসুল (স) বলেছেন, ‘অনেক রোজাদার এমন আছে, যাদের রোজা দ্বারা ক্ষুধার্ত থাকা ছাড়া আর কিছুই লাভ হয় না। বহু নামাজ আদায়কারী এমন আছে, যাদের জাগ্রত থাকা ব্যতীত অন্য কিছু অর্জন হয় নাÑ যাদের দেহ রোজা পালন করেছে, কিন্তু অন্তর রোজা পালন করেনি।’

সুতরাং রোজা রাখার মধ্য দিয়ে ধৈর্য, সহনশীলতা, সমমর্মিতাÑ এই গুণাবলি অর্জন করতে হবে। আর পবিত্র এ মাস আল্লাহ তায়ালা আমাদের দান করেছেন এ জন্যই, যেন আমরা নিজেদের ভেতরের পশুত্ব, বর্বরতা, প্রতিহিংসা, অহঙ্কার দূর করতে পারি। রোজাসংক্রান্ত মাসআলা রোজাদার রোজার কথা ভুলে গিয়ে পানাহার করে ফেললে তার রোজা নষ্ট হবে না। তবে রোজা থাকার কথা স্মরণ হওয়ামাত্রই পানাহার পরিত্যাগ করতে হবে। হাদিস শরিফে বর্ণিত হয়েছে, যে ব্যক্তি ভুলে আহার করল বা পান করল, সে যেন তার রোজা পূর্ণ করে। কারণ আল্লাহই তাকে পানাহার করিয়েছেন। (সহি মুসলিম)।

আপনি আরও পড়তে পারেন